তথাকথিত বাঙালি সমাজের প্রতি নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাত্রজীবন - Abhijit Banerjee's Student life
ঠিক যে দিনে স্টেপ আউট করে দুপা এগিয়ে ছক্কা হাঁকানো সৌরভ গাঙ্গুলি BCCI এর প্রেসিডেন্ট পদে বসলেন, ঠিক সে দিনই আমাদের আরও এক বঙ্গসন্তান সকল সমালোচনাকে বাউন্ডারির বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নোবেল জয় করলেন। তিনি হলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন কালের প্রজারা নতুন করে বাঙালির ইতিহাস রচনায় ব্যাস্ত হয়ে উঠেছিল।
এক দিকে বাঙালি শাসকের দল যখন "ছাত্র রাজনীতি" বন্ধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল, ঠিক তখনই ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিখ্যাত শিক্ষাবিদ তথা নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৫ই আগস্ট,১৯১৩ সাল, সে দিনই এশিয়া মহাদেশের ত্রি-সীমানায় নোবেলের আগমনীর বার্তা এসেছিল যে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ীর রবি ঠাকুর সাহিত্তে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। সেটাই ছিল এশিয়া মহাদেশে তথা ভারতবর্ষের প্রথম নোবেল পুরস্কার।
তারপর থেকে সময়ের হাত ধরে অনেক বঙ্গসন্তানের হাতে নোবেল এসেছে। তবে চলতি বছরে সেই মুকুটে নতুন পালক যোগ করলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। কান পাতলে শোনা যাই, এক সময় ইংরেজরা নাকি বলতো,"What Bengal think today, India think tomorrow"। আর সেটাই করে দেখালেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
একদিকে গোটা দেশ যখন অর্থনীতিতে বেচাল হয়ে পড়েছে, ঠিক অন্যদিকে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।যেটা দেখার পর রীতিমত সমালোচকদের চোখ চরক গাছে।
ছাত্রজীবনে বরাবরই শান্ত স্বভাবের ছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার স্কুলের পড়াশোনা শেষ হয় কলকাতার South Point High School থেকে। পড়াশোনায় তিনি বরাবরই ভালো ছিলেন। কিন্তুু তিনি তথাকথিত বইপোকা ছিলেন না। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন।
স্কুল জীবন শেষ করার পর, ছেলেটার হাতে দুটো বড়ো সুযোগ এসেছিল, একদিকে প্রেসিডেন্সিতে অঙ্ক আর অর্থনীতির প্রবেশিকায় প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন, অন্যদিকে এসেছিলো আইএসআই-তে স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে পড়ার সুযোগ। তিনি হয়তো চাইলেই আইএসআই-তে পড়াশুনো করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারতেন। কিন্তু শুধুমাত্র খেলাধুলা ও আড্ডার সময় বের করার জন্য তিনি ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সিতে।
তিনি তার মাকে পরিস্কার জানিয়ে ছিলেন যে, রোজ মহানির্বান রোড থেকে বরানগর যেতে হলে খেলাধুলা আর আড্ডার সময় বের করতে পারবেন না। তাই তিনি প্রেসিডেন্সিতেই ভর্তি হবেন। আর তার মা-বাবাও ছেলের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলো, কারণ তার বাবা স্বয়ং প্রেসিডেন্সির অর্থনীতির প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ছেলেকে নিজের তত্তাবধানে রাখার লোভ সামলাতে পারলেন না তিনি।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া, এমনকি তিনি তার বাবার ক্লাস ডুব মেরেও বেশ কয়েকবার সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন।এসব এর প্রভাবে তার পড়াশোনার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালইয়ের পার্ট ওয়ান পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পর্যন্তও জোটেনি।যার জন্য তাকে অবশ্য পাড়া-প্রতিবেশীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিল যে অভিজিৎ গোল্লাই গিয়েছে। তবে ঠিক পরের বছরই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট টু পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলেন এবং সমালোচকদের মুখে সাটিয়ে থাপ্পড় ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। এভাবেই তিনি ছাত্রজীবনে সমাজের তথাকথিত চিন্তা ধারাগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন।
এরপর কলেজের পাঠ চুকিয়ে তিনি মাস্টার্স করার জন্য দিল্লির জেএনইউ-তে ভর্তি হয়েছিলেন।জেএনইউ গিয়ে তিনি ছাত্র রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। তার পর ক্যাম্পাসে মুক্ত পরিবেশের দাবিতে আন্দোলন চালান। তৎকালীন জেএনইউ উপাচার্য ছিলেন PN Srivastava।অভিজিৎ ও তার সহপাঠীরা মিলে PN Srivastava-র বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন।যার কারণে তাদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আর এই অপরাধের কারণে তাদেরকে একটানা 10 দিন তিহার জেলে কাটাতে হয়েছিল। এভাবেই চলছিল অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর ছাত্ররাজনীতি।
তিনি তিহার জেলে কাটানো প্রথম ব্যক্তি যিনি পরবর্তীতে নোবেল পেলেন। এভাবেই বাঙালি সমাজকে তিনি শিখিয়েছেন, কিভাবে নিজের মত করে বাঁচতে হয়, পড়াশোনাটা জীবনের একটা অঙ্গ মাত্র! পড়াশোনা মানেই যে জীবন নয়, সেটাই আমাদের অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শেখালেন।
এক দিকে বাঙালি শাসকের দল যখন "ছাত্র রাজনীতি" বন্ধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল, ঠিক তখনই ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিখ্যাত শিক্ষাবিদ তথা নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৫ই আগস্ট,১৯১৩ সাল, সে দিনই এশিয়া মহাদেশের ত্রি-সীমানায় নোবেলের আগমনীর বার্তা এসেছিল যে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ীর রবি ঠাকুর সাহিত্তে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। সেটাই ছিল এশিয়া মহাদেশে তথা ভারতবর্ষের প্রথম নোবেল পুরস্কার।
তারপর থেকে সময়ের হাত ধরে অনেক বঙ্গসন্তানের হাতে নোবেল এসেছে। তবে চলতি বছরে সেই মুকুটে নতুন পালক যোগ করলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। কান পাতলে শোনা যাই, এক সময় ইংরেজরা নাকি বলতো,"What Bengal think today, India think tomorrow"। আর সেটাই করে দেখালেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
একদিকে গোটা দেশ যখন অর্থনীতিতে বেচাল হয়ে পড়েছে, ঠিক অন্যদিকে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।যেটা দেখার পর রীতিমত সমালোচকদের চোখ চরক গাছে।
ছাত্রজীবনে বরাবরই শান্ত স্বভাবের ছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার স্কুলের পড়াশোনা শেষ হয় কলকাতার South Point High School থেকে। পড়াশোনায় তিনি বরাবরই ভালো ছিলেন। কিন্তুু তিনি তথাকথিত বইপোকা ছিলেন না। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন।
স্কুল জীবন শেষ করার পর, ছেলেটার হাতে দুটো বড়ো সুযোগ এসেছিল, একদিকে প্রেসিডেন্সিতে অঙ্ক আর অর্থনীতির প্রবেশিকায় প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন, অন্যদিকে এসেছিলো আইএসআই-তে স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে পড়ার সুযোগ। তিনি হয়তো চাইলেই আইএসআই-তে পড়াশুনো করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারতেন। কিন্তু শুধুমাত্র খেলাধুলা ও আড্ডার সময় বের করার জন্য তিনি ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সিতে।
তিনি তার মাকে পরিস্কার জানিয়ে ছিলেন যে, রোজ মহানির্বান রোড থেকে বরানগর যেতে হলে খেলাধুলা আর আড্ডার সময় বের করতে পারবেন না। তাই তিনি প্রেসিডেন্সিতেই ভর্তি হবেন। আর তার মা-বাবাও ছেলের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলো, কারণ তার বাবা স্বয়ং প্রেসিডেন্সির অর্থনীতির প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ছেলেকে নিজের তত্তাবধানে রাখার লোভ সামলাতে পারলেন না তিনি।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া, এমনকি তিনি তার বাবার ক্লাস ডুব মেরেও বেশ কয়েকবার সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন।এসব এর প্রভাবে তার পড়াশোনার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালইয়ের পার্ট ওয়ান পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পর্যন্তও জোটেনি।যার জন্য তাকে অবশ্য পাড়া-প্রতিবেশীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিল যে অভিজিৎ গোল্লাই গিয়েছে। তবে ঠিক পরের বছরই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট টু পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলেন এবং সমালোচকদের মুখে সাটিয়ে থাপ্পড় ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। এভাবেই তিনি ছাত্রজীবনে সমাজের তথাকথিত চিন্তা ধারাগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন।
এরপর কলেজের পাঠ চুকিয়ে তিনি মাস্টার্স করার জন্য দিল্লির জেএনইউ-তে ভর্তি হয়েছিলেন।জেএনইউ গিয়ে তিনি ছাত্র রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। তার পর ক্যাম্পাসে মুক্ত পরিবেশের দাবিতে আন্দোলন চালান। তৎকালীন জেএনইউ উপাচার্য ছিলেন PN Srivastava।অভিজিৎ ও তার সহপাঠীরা মিলে PN Srivastava-র বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন।যার কারণে তাদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আর এই অপরাধের কারণে তাদেরকে একটানা 10 দিন তিহার জেলে কাটাতে হয়েছিল। এভাবেই চলছিল অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর ছাত্ররাজনীতি।
তিনি তিহার জেলে কাটানো প্রথম ব্যক্তি যিনি পরবর্তীতে নোবেল পেলেন। এভাবেই বাঙালি সমাজকে তিনি শিখিয়েছেন, কিভাবে নিজের মত করে বাঁচতে হয়, পড়াশোনাটা জীবনের একটা অঙ্গ মাত্র! পড়াশোনা মানেই যে জীবন নয়, সেটাই আমাদের অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শেখালেন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন - দশের কথা
COMMENTS