মারণ জ্বর ডেঙ্গুর অন্যতম প্রধান লক্ষণ জ্বর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে সাধারণ জ্বরের লক্ষণ গুলো আলাদা করতে পারি না।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ |
ডেঙ্গু ( dengue ) জ্বর হল মশা বাহিত সংক্রমক রোগ। এডিস নামের মশা দ্বারা মূলত এই রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বর DENV নামের ভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। মানুষের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হিসেবে জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুসকুড়ি দেখা যায়।
ডেঙ্গু ভাইরাস ৪ প্রকারের হয় ( What are the types of dengue virus ):-
একজন ব্যক্তি তার জীবন সময়ের মধ্যে DEN - 1,DEN - 2 এবং DEN - 3 ভাইরাসের কারণে আলাদা ভাবে ৩ বার ডেঙ্গু জ্বরে সংক্রমিত হয়ে লক্ষণ দেখা দিতে পারে।সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১০০ টির বেশি দেশে মত ৩ বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু সংক্রমিত অঞ্চলে বসবাস করে। ভারতবর্ষে ২০১৯ সালে সর্বমোট ১৩৬৪২২ জন মানুষ ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে যদি বাংলাদেশে চোখ রাখা যায়, তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের অবস্থাও খুব একটা ভালো নেই। প্রতিবছর বাংলাদেশে ৮০ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়।
প্রতি বছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ সারা বিশ্ব জুড়ে ডেঙ্গু ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হয়। যাদের মধ্যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষের শরীরে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ হয়ে থাকে, যাদের মধ্যে থেকে প্রায় ২২ হাজার মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে ভুগে মারা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি? ( Symptoms of dengue fever )
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পেলেও, মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে না। প্রতি ৪ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরের দ্বারা সংক্রমিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ খুবই মারাত্মক ভাবে প্রকাশ পায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ মারাত্মক ভাবে প্রকাশ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি রোগীকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া না হয়, তাহলে রোগীর প্রাণঘাতী হতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়ঃ-
- মাথা ব্যাথা এবং চোখে ব্যাথা, সাধারণত চোখের ভিতরে প্রচণ্ড ব্যাথা করে, গাঁটে গাঁটে ব্যাথা হতেও দেখা যায়।
- পুরো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুসকুড়ি ফুটতে দেখা যায়, এবং চুলকাতে থাকে।
- বমি বমি ভাব দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী বমি করতে থাকে।
- সব থেকে মারাত্মক লক্ষণ, শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং রোগী জ্বরে কাঁপতে থাকে।
- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে ৩ বারের বেশি বমি করতে দেখা যাবে।
- পায়খানার সঙ্গে রক্তের চ্যাঁই দেখা যেতে পারে।
- নাক দিয়ে রক্তের ফোঁটা বের হতে পারে।
- প্রচণ্ড অসুস্থ বোধ হবে।
ডেঙ্গু রোগীর বাড়ীতে চিকিৎসার প্রাথমিক নিয়ম ( Treatment at the home of a dengue patient ):-
গ্রামাঞ্চলে বা বর্ষার সময়, এমন অনেক পরিস্থিতি দেখা যায়, যেখানে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে আমাদের প্রাথমিক ভাবে যা কিছু করনীয়,
- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে জলের মাত্রা খুব দ্রুত কমতে শুরু করে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলোর মধ্যে এটাও অন্যতম একটি লক্ষণ। সর্বদা রোগীর দিকে খেয়াল রাখুন, এবং ঘন ঘন জল খাওয়াতে থাকুন।
- ডেঙ্গু রোগীর জ্বর খুব বাড়লে, কপালে ঠাণ্ডা জলের জলপট্টি দিতে পারেন।
- বাড়ীতে যদি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট থাকে, তাহলে ডেঙ্গু রোগীকে প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারেন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে কি কি করনীয়ঃ-
ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রধান করনীয় হল, মশা থেকে দূরে থাকা, কিন্তু কি ভাবে?
মশা মারার জন্য বিভিন্ন প্রকারের বিষ পাওয়া যায়, ওগুলো ব্যবহার করতে পারেন। বাড়ীর আসে পাশে কোথাও জল জমতে দেবেন না।
বাড়ীর আসে পাশে কোথাও ডোবা থাকলে ওটাকে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলুন, এবং ওই ডোবার জলে গাপ্পি মাছ ছেড়ে দিন।
এছাড়াও এমন পোশাক পড়ুন, যাতে মশা আপনার ত্বকে কামরাতে না পারে।
COMMENTS